“হয় দেহ দাহ করো, না হলে নদীতে ফেলে দেবো!” পুলিশের নির্দেশে আতঙ্কিত আত্মঘাতী কৃষ্ণেন্দুর পরিবার

পাঁশকুড়া: রংচটা দালানের এক কোণে পড়ে আছে একটি পুরনো সাইকেল। একসময় ঐ সাইকেলেই চড়ে স্কুলে যেত বছর বারোর কৃষ্ণেন্দু দাস। শুধু স্কুল নয়, চিপস, লজেন্স কিংবা খেলার মাঠ—প্রতিদিনকার ছোট ছোট স্বপ্নে তার সঙ্গী ছিল এই সাইকেলটি। আজ সেই সাইকেল নিশ্চুপ। ঘরের এক কোণে পড়ে থাকা বইখাতাগুলোর পাতা দুলছে হাওয়ায়, কিন্তু সেই পাতায় আর কখনো লেখা হবে না কৃষ্ণেন্দুর হাতের লেখা।

গত রবিবার, দুপুরবেলা চিপস কেনার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়েছিল কৃষ্ণেন্দু। পাড়ার দোকানে গিয়ে ডাকাডাকি করেও দোকানদারকে পায়নি। দোকানের বাইরেই পড়েছিল হাওয়ায় উড়ে আসা চিপসের প্যাকেট। সেটি হাতে নিয়ে সাইকেলে বাড়ি ফেরার পথেই বিপত্তি।

"হয় দেহ দাহ করো, না হলে নদীতে ফেলে দেবো!" পুলিশের নির্দেশে আতঙ্কিত আত্মঘাতী কৃষ্ণেন্দুর পরিবার
কৃষ্ণেন্দু দাস এর সাইকেল।— নিজস্ব চিত্র

অভিযোগ, দোকানদার—যিনি একজন সিভিক ভলেন্টিয়ার—সবার সামনে ওই নাবালককে রাস্তার ওপর বকাঝকা শুরু করেন।

ঘটনার পর কৃষ্ণেন্দুর মা দোকানে এসে ছেলেকে শাসন করেন। ইতিমধ্যেই এই ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ প্রকাশে এসেছে যেখানে দেখা যাচ্ছে ছেলেকে শাসন করার সময় সিভিক ভলেন্টিয়ার মাকে থামাচ্ছেন। কিন্তু সকলের সামনেই এই অপমান আর অপবাদ মেনে নিতে পারেনি কৃষ্ণেন্দু। বাড়ি ফিরে নিজের হাতে লেখা একটি সুইসাইড নোটে লিখে যায়— “মা, আমি চুরি করিনি।” তারপরেই আত্মঘাতী হয় সে।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে পুরো ঘটনা। যদিও এখনও থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেননি পরিবার, তবে কৃষ্ণেন্দুর মায়ের কথায়, “আমরা ক্লান্ত। কেউ পাশে নেই। যেই পাশে আসছে তাকেই পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে।”

অভিযোগ আরও গুরুতর— কৃষ্ণেন্দুর মায়ের অভিযোগ ছেলে মারা যাওয়ার পর তার দেহ যখন বাড়িতে আসে তখন গ্রামবাসীরা দেহ নিয়ে অভিযুক্ত সিভিকের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখাতে যায়, তখন পুলিশের পক্ষ থেকে সাফ বলা হয়— “হয় দেহ দাহ করো, না হলে নদীতে ভাসিয়ে দেবো। নইলে আবার মর্গে নিয়ে চলে যাব।”

পরিবারের দাবি, শেষমেশ পুলিশের জোরাজুরিতেই দেহ নিয়ে চলে যায় তারা এবং দাহ করে ফেলে। উপস্থিত গ্রামবাসীদের উপর চলে লাঠিচার্জ। কৃষ্ণেন্দুর মা বলছেন, “আমরা কিছুই করতে পারলাম না। পুলিশ যা বলল, তাই করল।”

অন্যদিকে, অভিযুক্ত সিভিক ভলেন্টিয়ারের স্ত্রী দাবি করেছেন, তার স্বামী নির্দোষ। তিনি বলেন, “আমার স্বামী জনসেবার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। এর আগেও বহু কাজ করে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। সম্ভবত সেই জনপ্রিয়তাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

অভিযুক্ত সিভিক ভলেন্টিয়ারের স্ত্রী।— নিজস্ব চিত্র

তাঁর কথায়, গত ডিসেম্বর মাসে পাঁশকুড়ার সিদ্দা দুই গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান হামিদুল খানের এক ফেসবুক পোস্টে দেখা গিয়েছিল কীভাবে ওই সিভিক ভলেন্টিয়ার মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করছেন। তাহলে কি জনপ্রিয়তাই কাল হল ওই সিভিকের জন্য? নাকি সত্যিই অপবাদ, অপমান আর প্রভাবের চাপে বলি হল একটি নিষ্পাপ শিশু?

গ্রামবাসীরা জানতে চাইছেন—এই মৃত্যুর দায় কে নেবে? একটা নিষ্পাপ প্রাণ হারানোর মূল্য কীভাবে চুকোবে এই সমাজ ও প্রশাসন?

কৃষ্ণেন্দুর পরিবারের কাঁদা কণ্ঠে শুধুই একটাই কথা— “আমার ছেলে চোর ছিল না।”

এক ক্লিকে সব খবরJoin
এক ক্লিকে সব খবর, সবার আগে Join
এক ক্লিকে সব খবর Join
WhatsApp Channel Join Now

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আমদের ফলো করুন

170,000FansLike
10,000FollowersFollow
5,000SubscribersSubscribe

সর্বশেষ সংবাদ

ডেবরার মাড়োতলায় ভয়াবহ পথদুর্ঘটনা, বাস ও বাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষে মৃত ২, আহত ১

ডেবরা, পশ্চিম মেদিনীপুর: মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল দুই...

সুন্দরবনে শুরু হচ্ছে বাঘ শুমারি: বসানো হবে ১৪৪৪টি ক্যামেরা

Sundarban: সুন্দরবনের অরণ্যে আবারও শুরু হতে যাচ্ছে বাঘ শুমারি।...

Debra College: সাইকেল নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল ডেবরা কলেজের...

অমিত খিলাড়ি, ডেবরা: সাইকেল নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় মর্মান্তিক...

পাঁশকুড়া চিপসকাণ্ডে সিভিকের বিরুদ্ধে FIR কৃষ্ণেন্দুর মায়ের

পাঁশকুড়া: চিপস চুরির অপবাদে আত্মঘাতী সপ্তম শ্রেণির ছাত্র কৃষ্ণেন্দু...
WhatsApp