অমিত খিলাড়ি, সবং: সবংয়ের কুলেশ্বরী গ্রাম। লোকসংস্কৃতির পরম্পরায় মোড়া, এক অপার ইতিহাসের সাক্ষী এই ভূমি। আর সেই ইতিহাসেরই যেন জীবন্ত প্রতিচ্ছবি চড়ক উৎসবের এক অভিনব রীতি।
প্রায় ৫০০ বছরের পুরোনো রুদ্রেশ্বর জীউ শিব মন্দির। চড়ক মেলা শেষে এই মন্দির চত্বরে চোখ কপালে তোলার মতো দৃশ্য—সন্নাসীরা কাঁধে তুলে নিচ্ছেন ‘প্রতীকি শবদেহ’। শুধু তুলে নেওয়াই নয়, সেই প্রতীকী সব দাহ নিয়ে তাঁরা তিনবার ঘুরছেন মন্দিরের চারপাশে। প্রশ্ন জাগে, কেন এই অভিনব রীতি? কেন চড়কের পরই এই ‘প্রতীকি শবদাহ’? উত্তর খুঁজতে গেলে খোলা পড়ে যায় ইতিহাসের এক ভয়ানক অধ্যায়।

মন্দিরের পুরোহিতের কথায় উঠে আসে এক গা ছমছমে কাহিনি— শোনা যায়, বহু বছর আগে এই গ্রামে গাজনের সময় উপস্থিত ছিলেন ১৬ জন ভোক্তা। চল ছিল, একসঙ্গে কেউই পুকুরে স্নান করতে পারবে না। প্রথমে ‘পাট ভোক্তা’, তারপর একে একে বাকিরা। কিন্তু সেই বছর নিয়ম ভেঙে একসঙ্গে জলে নামে ১৬ জনই। আর সেখানেই ঘটে অঘটন—জীবন হারান সকলেই!
তারপর থেকেই শুরু হয় এই প্রতীকী রীতি। চড়ক শেষে প্রতীকি শব কাঁধে তুলে মন্দিরের তিনবার প্রদক্ষিণ। তারপর সেই ‘শব’ পোড়ানো হয় গ্রাম্য শ্মশানে।
পরদিন, নখ-চুল কেটে, মাছ কিনে বাড়ি ফেরা—এইসব মেনে তবেই সম্পন্ন হয় পুরো প্রথা। তবে এর সত্যতা নিয়ে রয়েছে বিতর্কও। কেউ বলেন লোককথা, কেউ বলেন ইতিহাস। কিন্তু প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই বিশ্বাস আর রীতির চর্চা করে চলেছে কুলেশ্বরী গ্রাম।

চড়ক, শিব, আর প্রাচীন লোকাচার—সব মিলিয়ে এক সাংস্কৃতিক বিস্ময় হয়ে উঠেছে রুদ্রেশ্বর জীউ মন্দির। শেষে প্রশ্ন থেকেই যায়—এই রীতি কি নিছক বিশ্বাস? নাকি ইতিহাসের গায়ে লেখা এক করুণ অধ্যায়ের ছায়া? আপনি কী ভাবছেন? এই অলৌকিক রীতির পেছনে লুকিয়ে থাকা সত্যই কি আপনার চেনা বাস্তবকে নাড়িয়ে দেবে?