অমিত খিলাড়ি, পিংলা: দিনটা শুরু হয়েছিল অভাবের ছায়ায়, শেষ হলো মৃত্যু দিয়ে। মাত্র ১০ বছরের ছোট্ট মঙ্গল নায়েক—যার এখনও স্কুলের ব্যাগ কাঁধে চাপার কথা, সে এদিন কাঁধে তুলেছিল চালের ব্যাগ। জীবনের প্রয়োজন ছিল দু’মুঠো চাল, অথচ ফিরে এল লাশ হয়ে। মায়ের কোলেই ঝরে গেল তার শ্বাস।
ঘটনাস্থল পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা থানার টুঙ্গুর গ্রাম। দরিদ্র পরিবারের ছেলে মঙ্গল, প্রতিদিনের মতোই মঙ্গলবার ভোরে মায়ের সঙ্গে বেরিয়েছিল ভিক্ষে করতে। এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রাম ঘুরে, ধূলিধুসর পথ বেয়ে, কখনও ধানের গন্ধে ভরা উঠোনে পা দিয়ে, কখনও গৃহস্থের দয়ার দৃষ্টির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে—তাঁদের দিন কেটেছিল চাল জোগাড়ে।

বিকেলে বাড়ি ফেরা পথেই ঘটে বিপর্যয়। আকাশে তখনো কালো মেঘের ছায়া। হঠাৎই ভেদ করে আসে বিদ্যুতের ভয়াল লম্বা রেখা। বাজ পড়ে পথেই। ছিটকে পড়ে মা আর ছেলে। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মঙ্গল—নিঃশ্বাস থেমে যায় মুহূর্তেই। মা অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান পাশে।
স্থানীয় মানুষজন ছুটে এসে উদ্ধার করেন তাঁদের। দ্রুত নিয়ে যাওয়া হয় পিংলা গ্রামীণ হাসপাতালে। কিন্তু তখন আর কিছু করার ছিল না। চিকিৎসকরা জানান, ছেলে আগেই মারা গিয়েছে। মায়ের শরীরে আঘাত তেমন গুরুতর নয়, কিন্তু তাঁর চোখে এখন শুধুই শুন্যতা।
শোকস্তব্ধ টুঙ্গুর গ্রাম। ছোট্ট একটি প্রাণ অভাব আর প্রকৃতির নির্মমতায় হারিয়ে গেল অকালেই। পিংলা থানার পুলিশ দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে। সেখান থেকে দেহ তুলে দেওয়া হবে পরিবারের হাতে।
ঘটনার পর থেকে একটা প্রশ্নই ঘুরছে পিংলার ঘরে ঘরে—একটা ১০ বছরের শিশুর জীবনের মূল্য কী? কাঁধে বইয়ের ব্যাগ নয়, চালের বস্তা—এই কি তার ভবিষ্যৎ?