সিভিক ভলান্টিয়ার: এত ‘নির্ভীক’ কেন? ধ/র্ষ/ণ থেকে তোলাবাজি, কেন বারবার অভিযুক্ত তারাই?

কলকাতা ও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সিভিক ভলান্টিয়ারদের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ উঠে আসছে। কখনও কনস্টেবলের পোশাক গায়ে দাদাগিরি, কখনও আবার সাধারণ মানুষকে মারধরের অভিযোগ। কখনো প্রগতি ময়দান থেকে পাঁশকুড়া,আবার মালদহ থেকে বরাহনগর—প্রায় সর্বত্রই ধরা পড়ছে সিভিকের একাংশের বেপরোয়া আচরণ। ফলে সাধারণ মানুষের মনেপ্রশ্ন উঠছে, কতটা ক্ষমতা রয়েছে তাদের হাতে? কারা নিয়ন্ত্রণ করে এই বাহিনীকে?

সম্প্রতিকিছু দিন আগে প্রগতি ময়দান থানার অধীনে থাকা সিভিক ভলান্টিয়ার নীরজ সিং-এর বিরুদ্ধে পুলিশের পোশাক পরে দাদাগিরির অভিযোগ ওঠে। কিন্তু পরে স্থানীয়দের অভিযোগে তিনি ধরা পড়েন পুলিশের হাতে। এর আগে গত বছর আরজি কর হাসপাতালে মদ্যপ অবস্থায় একজন সিভিক ভলান্টিয়ারের আচরণ ঘিরেও তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। এমনকি ধর্ষণের মতো গুরুতর অভিযোগেও একাধিকবার জড়িয়েছে সিভিক সদস্যদের নাম।

আবার চলতি সপ্তাহেই পাঁশকুড়ায় এক কিশোরকে চিপস চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে হেনস্থার অভিযোগ ওঠে এক দোকানদার তথা সিভিকের বিরুদ্ধে। মার্চে মালদহে তিন সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে এক গাড়ি চালককে মারধরের অভিযোগ ওঠে। সম্প্রতি বরাহনগরে এক মহিলাকে চাঁদা তোলার সময় ধরা পড়ে যান এক মহিলা সিভিক। তখন অবশ্য কেঁদে ক্ষমা চান তিনি।

তোলাবাজির অভিযোগে এক সিভিক ভলান্টিয়ার।
প্রতীক ছবি: তোলাবাজির অভিযোগে এক সিভিক ভলান্টিয়ার।

এই পরিপ্রেক্ষিতে আবার প্রশ্ন উঠছে সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ ও কাজের সীমা নিয়ে। সুপ্রিম কোর্ট ও কলকাতা হাইকোর্ট ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে, আইনশৃঙ্খলার কাজ সামলানো সিভিকদের কাজ নয়। ট্র্যাফিক পরিচালনা, উৎসব বা জনসমাগমে পুলিশের সহায়ক হিসেবেই তাঁদের ব্যবহার করার নির্দেশ রয়েছে আদালতের।

কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন ছবি। একাংশ সিভিক ভলান্টিয়ার কার্যত পুলিশের ভূমিকায় নেমে পড়ছেন, আর সেটাই ঘটাচ্ছে বিপত্তি। নিয়োগের দিক থেকেও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। ২০১১ সালে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই সিস্টেম চালু হয়। প্রাথমিকভাবে মাধ্যমিক পাশ যোগ্যতা থাকলেও পরে তা নামিয়ে আনা হয় অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। বর্তমানে রাজ্যে প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার সিভিক কর্মরত রয়েছেন, যাঁদের মধ্যে বহুজনকে দেখা যাচ্ছে পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশ নিতে।

প্রাক্তন পুলিশ আধিকারিক অরিন্দম আচার্য বলেন, “প্রশাসন যে নির্দিষ্ট নির্দেশ দিচ্ছে, একাংশ পুলিশই তা মানছে না। এর ফলেই সিভিকদের মাধ্যমে এসব ঘটনা ঘটছে।” অন্যদিকে, বিজেপি নেতা সজল ঘোষের মন্তব্য, “সিভিক বলেই যারা পরিচিত, তাদের অনেকেই তৃণমূল ঘনিষ্ঠ দুষ্কৃতী। আগে তোলাবাজি করত, এখনও করছে কনস্টেবলের পোশাক গায়ে।”

এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের মনে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন—আদতে কাদের জন্য তৈরি হয়েছিল এই সিস্টেম? আর কেন নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না তাদের বাড়বাড়ন্ত?

এক ক্লিকে সব খবর Join
এক ক্লিকে সব খবর, সবার আগে Join
এক ক্লিকে সব খবরJoin

WhatsApp Channel Join Now

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আমদের ফলো করুন

170,000FansLike
10,000FollowersFollow
5,000SubscribersSubscribe

সর্বশেষ সংবাদ

এভারেস্টের চূড়ায় তমলুকের লক্ষ্মীকান্ত! পুলিশ কনস্টেবলের ঐতিহাসিক জয়, বাড়িতে সংবর্ধনায় ভাসছে গ্রাম

নিজস্ব সংবাদদাতা, পূর্ব মেদিনীপুর: মনোবল, অধ্যবসায় আর সাহস—এই তিনে...

মধ্যরাতে সবংয়ের ভয়াবহ পথদু*র্ঘটনা: মৃ*ত্যু ২, আ*হত ২

অমিত খিলাড়ি, সবং : পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সবং ব্লকে...

তুমি নারী, রক্ত দেখে ঘুরতো তোমার মাথা—সেই নারী তুমিই আজ রক্তদাতা

অমিত খিলাড়ি, সবং: সবং-এর দুবরাজপুরে অনুষ্ঠিত এক ব্যতিক্রমী রক্তদান...
WhatsApp