পাঁশকুড়া: “মা, আমি চুরি করিনি!” হৃদয়বিদারক সুইসাইড নোট! চুরির অপবাদেই বিষ খেয়ে মৃত্যু ক্লাস সেভেনের পড়ুয়ার! তোলপাড় পাঁশকুড়া!”মা, আমি চুরি করিনি…” — এই একটি লাইনেই চোখের জলে ভেসেছে গোটা পাঁশকুড়া। সপ্তম শ্রেণির ছাত্র কৃষ্ণেন্দু দাস চুরির অপবাদ সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করল। আর সেই মৃত্যুর আগে যা লিখে গেল, তা শুধু একটি পরিবার নয়, কাঁদিয়ে তুলেছে গোটা রাজ্যকে।
ঘটনা পাঁশকুড়ার গোঁসাইবেড় বাজারে। রবিবার বিকেলে চিপস কিনতে গিয়েছিল কৃষ্ণেন্দু। পরিবারের দাবি, দোকানে চিপস ছিল না, দোকানদারও সাড়া দেয়নি। দোকানের সামনেই পড়ে থাকা এক প্যাকেট চিপস কুড়িয়ে নিয়ে বাড়ি ফেরার সময়ই ঘটে সর্বনাশ। অভিযোগ, দোকানের মালিক শুভঙ্কর দীক্ষিত — যিনি আবার সিভিক ভলান্টিয়ার — মোটরবাইকে ধাওয়া করে ধরে ফেলে কৃষ্ণেন্দুকে।
অভিযোগ আরও গুরুতর — বাজারের মাঝখানে কানে ধরে ওঠবস করানো হয় তাকে, দেয়া হয় চুরির অপবাদ। মারধরও করা হয় বলে দাবি পরিবারে। অথচ কৃষ্ণেন্দুর মা-বাবার দাবি, ছেলেটি চিপসের দাম দিয়ে দিয়েছিল শুভঙ্করকে।

এই অপমান সহ্য করতে না পেরে, নিজের ঘরে রেখে দেওয়া কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে কৃষ্ণেন্দু। সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয় তমলুক মেডিকেল কলেজে। কিন্তু বাঁচানো যায়নি। বৃহস্পতিবার (২২ মে ২০২৫) সকালে মৃত্যু হয় কৃষ্ণেন্দুর।
ছেলের শেষ চিঠিতে লেখা — “মা, আমি চুরি করিনি…”। সেই চিঠি এখন কৃষ্ণেন্দুর মায়ের বুকে পোড়া ছাইয়ের মতো। এদিকে, অভিযোগের মুখে থাকা সিভিক ভলান্টিয়ার শুভঙ্কর দীক্ষিত এখনও নিরুত্তর। পরিবার ও প্রতিবেশীদের দাবি, শুভঙ্কর কোনও সিসিটিভি ফুটেজ দেখাতে রাজি হননি। প্রশ্ন উঠছে — আইন রক্ষার দায়িত্ব যাঁর কাঁধে, সেই তিনিই কি করে আইন নিজের হাতে তুলে নেন?
এই ঘটনার পরে এলাকায় তীব্র ক্ষোভ। শুভঙ্করের শাস্তির দাবি তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। একটা চিপসের প্যাকেট, একটুখানি অপমান — আর তারই মূল্য দিতে হল প্রাণ দিয়ে। শুধু প্রশ্ন থেকেই যায় — কোথায় আমাদের মানবিকতা? কোন সমাজে বড় হচ্ছে আমাদের সন্তানরা?