অমিত খিলাড়ি, সবং: ভালোবাসার নামে প্রতারণা! প্রেমে ছেঁকা খেয়ে জীবনের ইতি টানল পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং-এর যুবক। চোখে জল, হাতে মোবাইল… মৃত্যুর আগে শেষ ভিডিও বার্তায় প্রেমিকার শাস্তির দাবি জানিয়ে চিরঘুমের দেশে পাড়ি দিল সুজয় মাইতি।
সূত্রের খবর, সবং-এর অমরবার গ্রামের বাসিন্দা সুজয়য়ের ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় হয় চাঁদকুড়ি এলাকার দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীর সঙ্গে।
ধীরে ধীরে তৈরি হয় প্রেমের সম্পর্ক। একাধিকবার সুজয়ের বাড়িতে যাতায়াত ছিল, এমনকি আত্মীয়দের বাড়িতেও একসাথে যাতায়াত করত—সম্পর্ক ছিল একেবারে সিরিয়াস পর্যায়ে।
কিন্তু হঠাৎই ছন্দপতন। সুজয়ের পরিবারের দাবি, কিছুদিন আগে একটি অজানা কারণে দু’জনের মধ্যে তীব্র ঝামেলা হয়। তারপর থেকেই ওই ছাত্রী সুজয়ের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে মোবাইল, সর্বত্র ব্লক করে দেয় ছেলেটিকে। এই আচমকা ব্যবহারে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে সুজয়।
কয়েকবার চেষ্টা করেও ছাত্রীটির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি। পরে সুজয় জানতে পারে ওই ছাত্রী এখন অন্য এক ছেলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছে।

শেষ চেষ্টা হিসেবে ছাত্রীটির দাদার সঙ্গে যোগাযোগ করে সুজয়। তাদের প্রেমের কিছু ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি শেয়ার করে সত্যিটা বোঝাতে চায়।
কিন্তু এই ঘটনাই যেন নতুন এক মোড় এনে দেয়। সুজয়ের পরিবারের অভিযোগ, এরপরেই ছাত্রীর পরিবার সবং থানায় ব্ল্যাকমেলিং-এর অভিযোগ দায়ের করে সুজয়ের বিরুদ্ধে। থানায় ডেকে পাঠানো হয় দু’পক্ষকে। সেখানে ছাত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, সে আর সুজয়ের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক রাখতে চায় না।
এই কথার পরেই মানসিকভাবে একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে সুজয়। কয়েকদিন বাড়িতে থাকার পর চলে যায় হাওড়ার পাঁচলা থানা এলাকায়, একটি সোলার কোম্পানিতে চাকরির জন্য। আর সেখানেই ঘটে জীবনের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি। অক্ষয় তৃতীয়ার দিন সকালে আত্মঘাতী হওয়ার আগে মোবাইলে নিজের শেষ বার্তা রেকর্ড করে সুজয়। সেই ভিডিওয় সে জানায়— “আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী ওই মেয়ে ও তার পরিবার। আমি চাই ওদের শাস্তি হোক।” এই ভিডিও সামনে আসতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা এলাকায়।
প্রেমে প্রতারণা, মানসিক ভাঙন, আর সমাজের চাপ—এই সব মিলিয়ে আরও একটি তাজা প্রাণ ঝরে গেল। প্রশ্ন উঠছে, যদি সম্পর্ক ভাঙে, তার দায় কেন নিতে হয় শুধুই ছেলেদের? ভালোবাসা কি আজ শুধুই একতরফা লড়াই?
আপনার কী মত? সুজয়ের মৃত্যু কি শুধুই আত্মহত্যা? নাকি আমাদের সমাজের অদৃশ্য চাপই এর পেছনের কারণ? কমেন্টে জানান আপনার মতামত।