অমিত খিলাড়ি, সবং: সবং-এর দুবরাজপুরে অনুষ্ঠিত এক ব্যতিক্রমী রক্তদান শিবিরে নজির গড়লেন গ্রামের সাহসী নারীরা “তুমি নারী, রক্ত দেখে ঘুরতো তোমার মাথা। সেই নারী তুমিই আজ রক্তদাতা।” এই পংক্তি যেন শুধু একটি বাক্য নয়—এ যেন নতুন যুগের নারীর সাহস, চেতনা ও আত্মবিশ্বাসের এক অনন্য প্রতিচ্ছবি। সম্প্রতি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সবং ব্লকের দুবরাজপুর গ্রামে অনুষ্ঠিত হলো এক ব্যতিক্রমী রক্তদান শিবির। সবুজসাথী ক্লাবের উদ্যোগে, মেদিনীপুর জেলা ভলান্টারি ব্লাড ডোনার ফোরামের সবং ইউনিট এবং সম্পূর্ণা ইউনিটের সহযোগিতায় আয়োজিত এই রক্তদান শিবিরের বিশেষত্ব—রক্তদাতারা ছিলেন শুধুই নারী।
সমাজের বাঁধাধরা ধারণায় আঘাত
দীর্ঘদিন ধরেই সমাজে প্রচলিত এক ভুল ধারণা—নারীরা শারীরিকভাবে দুর্বল, তাই রক্তদান তাঁদের পক্ষে ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু সময় বদলেছে, বদলেছে নারীর ভূমিকা। এখনকার নারী ঘরের কাজ সামলে সমাজ, স্বাস্থ্যে, নেতৃত্বে সমানভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করছেন। এই রক্তদান শিবির তাই শুধু এক দিনের উদ্যোগ নয়—এ এক সমাজ বদলের পদক্ষেপ।
রক্তদানে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোই লক্ষ্য
এই শিবিরের মূল উদ্দেশ্য ছিল নারীদের রক্তদানে উৎসাহিত করা এবং তাঁদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলা। কারণ পরিসংখ্যান বলছে, দেশে এখনও রক্তদানের ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ তুলনামূলকভাবে কম। অথচ রক্ত সংকট মোকাবিলায় নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

রক্তদানের সাহসে সাহস পেল সমাজ
এই শিবিরে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি নারীর পদক্ষেপ এক সাহসিকতা। তাঁরা দেখিয়ে দিলেন—রক্তদান কোনো লিঙ্গভিত্তিক কাজ নয়, বরং এটি এক সামাজিক দায়িত্ব। তাঁদের এই সাহস সমাজে আরও নারীদের অনুপ্রাণিত করবে, ভাঙবে পুরনো ভয়ভীতির দেওয়াল।
কৃতজ্ঞতা এবং সম্মান
এই মহতী উদ্যোগ সফল করতে যারা পাশে থেকেছেন—সবুজসাথী ক্লাব, মেদিনীপুর জেলা ও সবং ব্লক ভলান্টারি ব্লাড ডোনার ফোরাম, “সম্পূর্ণা” ইউনিট, স্থানীয় শিক্ষক, সমাজকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের জানাই আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। আর যাঁরা নিজে রক্ত দিয়ে অন্যের প্রাণ বাঁচাতে এগিয়ে এসেছেন—সেই সাহসিনী নারীদের জানাই গভীর শ্রদ্ধা ও অভিনন্দন।
শেষ কথা
এই উদ্যোগ যেন একটি দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠে পশ্চিমবঙ্গ সহ গোটা দেশের প্রতিটি গ্রামের নারীর কাছে। আজকের নারী শুধু আশ্রয় চায় না—নিজেই হয়ে উঠছে আশ্রয়।
“নারী শক্তি, নারী সাহস—রক্তদান হোক তাঁদের নতুন চেতনা।”